অরুনা,আমি জানি ভালবেসে তোমাকে পাবনা, তবুও ভালবেসে বিরহ বাড়াই।আর পেলেও ভালবাসি বলেই তোমাকে আমি পেতে চাই না।অরুনার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিল বৈশাখ মাসের প্রথম দিনে।এটাকে ঠিক প্রথম দেখা বলা ঠিক হবে না।কারণ অরুনা কলেজে আমার সাথেই পড়ত।কিন্তু তার সাথে কলেজে পড়ার সময় কখনো পরিচয় হয়নি।বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম বৈশাখে তার সাথে আমার পরিচয়ের প্রথম সূর্যের দেখা মিলে।দেখাটা এক অদ্ভুতভাবে হয় তার সাথে ।মূলত পহেলা বৈশাখে,১৪ ফেব্রুয়ারী এই দিনগুলোতে প্রেমিক-প্রেমিকাদের বেশি দেখা যায় একসাথে ।আর যাদের এই বন্ধন থাকে না তারা হয়তো ঘরে বসে দিন কাটায় বা অনেকে এক সাথে দলবদ্ধ হয়ে ক্যাম্পাসে এ মাথা হতে ও মাথা মিছিল নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।মাঝে মাঝে এ মিছিলে স্লোগান ওঠে ‘আমাদের প্রেমিকা নাই,আমরা প্রেমিকা চাই বা আমাদের এ প্রহসন মানি না মানব না।ঐ দিন আমিও ছিলাম হতভাগ্য এই জনতার মিছিলে।হঠাৎ মিছিলের মধ্য থেকে খেয়াল করলাম আমার কিছু কলেজ ফ্রেন্ড দুটি মেয়ের সাথে দাঁড়িয়ে গল্প করছে।তখন হতভাগ্য জনতার মিছিল থেকে আমি বে্রেয়ি আসলাম এবং তাদের কাছে গেলাম।তখন আমার বন্ধুরা মেয়ে দুটির সাথে আমাকে পরিচয় করিয়ে দিলা।যাদের মধ্য অরুনাও ছিল।ঐ দিন আমরা সারাদিন ক্যাম্পাসে ঘুরলাম এবং রাত প্রায় ৮টার দিকে সবাই নিজ নিজ হল-এ ফিরলাম।ঐ দিন রাতে অরুনাকে আমি ফোন দিয়েছিলাম।কেন দিয়েছিলাম তার অথ অনেক আগে বুঝলেও ,তা অনুধাবন করছি এখন।যাই হোক,সেদিনের পর থেকে আমাদের দেখা হত প্রায়ই মাঝে মাঝে আমরা সবাই মিলে আড্ডা দিতাম।আবার মাঝে মাঝে আমি আর অরুনা ঘুরতে বেরিয়ে পড়তাম ।একদিন আমরা বন্ধুরা মিলে প্লান করলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে যাব ।প্লান অনুযায়ী আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে গেলাম।তখন বর্ষাকাল চলছিল।ক্যাম্পাসে ঢুকার পর বৃষ্টি শুরু হলো ।আর বৃষ্টি আমার খুবই প্রিয়।যখনই সুযোগ পেতাম ভিজে যেতাম।ঐখানেও তাই করলাম।আমি একাই ভিজছি।আর অন্য সবাই বৃষ্টি থেকে বাচারঁ জন্য নিরাপদ দূরত্বে আশ্রয় নিল।এক সময় বৃষ্টি থেমে গেল।কিন্তু তখ্ন আমার সমস্ত শরীর ভেজা।কেউ হয়তো এই বিষয়টি খেয়ালই করেনি।হয়তো আমিও করিনি।একটু পর দেখলাম অরুনা একটি রুমাল আমার দিকে এগিয়ে দিচ্ছে মাথামুছার জন্য।অরুনার হাত থেকে রুমালটা পাওয়ার পর কেন যেন মনে হলো এ রুমাল দিয়ে মাথার জল নয়,হৃদয়ের জল মছতে হবে।যা একটু একটূ জমে হৃদয়ে ক্ষত তৈরি করছে।যে রুমাল দিয়ে পানি মুছে কদমাক্ত হৃদয়কে বাচাঁতে হবে।এতদিন অরুনাকে আমি শুধু পছন্দই করতাম,ভাল হয়তো বাসতাম না।কিন্তু ঐ দিনের পর ওকে আমি আমার হৃদয় মন্দরের কোন এক জায়গায় স্থান দিয়েছিলাম।ভাবছিলাম অরুনাকে আমার ভাললাগার কথা জানাব।সে অনুযায়ী আমি একদিন তাকে জানাতেও যাই।কিন্তু আমরা যত সহ ভালবাসার কথা ভাবতে জানি,তত সহজে তা বলতে জানি না। অরুনার সাথে অনেক কথাই হচ্ছে কিন্তু তাকে আমার ভাললাগার কথাটা জানাতে পারছিলাম না।এক সময় তার পরিবার নিয়ে কথা বলা শুরু করলাম।যখন সে তার পরিবার নিয়ে কথা বলছিল,তখন তার মুখে বিমর্ষতার ভাব লক্ষ্য করলাম।অরুনা জানাল ওরা তিন বোন,ওদের কোন ভাই নেই।ওর মা-বাবা উভয়ই জীবিত আছেন।কিন্তু পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি তার বাবা অসুস্থ।তার বাবাকে দু-তিন মাস পরপর রক্ত দিতে হয়,আর সে রক্ত জোগার করতে হয় ওকে।এক সময় সে বলল-ও একটা ছেলের সন্ধান পেয়েছে।যাকে সে বিয়ে করবে।ঐ ছেলেটাকে বিয়ে করলে হয়তো সে তার পরিবারকে কিছুটা হলেও সহায়তা করতে পারবে।তারপর ওকে আমি আর আমার ভাললাগার কথা জানাতে পারিনি।শুনেছি কিছুদিন পর তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে।অনেক দিন হলো অরুনার সাথে আমার আর কোন যোগাযোগ হয় না।হঠাৎ একদিন অরুনাকে লাইব্ররীতে আবিষ্কা্র করলাম।সে পড়তে এসেছে লাইব্ররীতে।কারণ এখন আমাদের মার্স্টাস শেষ হয়ে গিয়েছে।তাই চাকরীর লাগামহীন বাজারে চাকরীর জন্য লাগাম ধরে বসতে হবে।আস্তে আস্তে আমরা এ্ক সাথে চাকরীর জন্য পড়তে শুরু করলাম।আর তার সাথে আগের মতো ঘনিষ্টতাও বাড়তে লাগলো।একদিন তার কাছে তার পারিবারিক জীবন সমন্ধে জানতে চাইলাম।তখন তার মুখে দেখলাম পূর্ব আকাশের কাল মেঘ।পরক্ষণে সে একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়ল।সে দীর্ঘ নিশ্বাসই বলে দেয় সে ভাল নেই।ঐ দিন সে আমাকে কিছুই বলেনি শুধু এটুকু বলেছে আমি চাকরীর খুঁজছি আমার মা-বাবার জন্য।পরে ওর এক বান্ধবীর কাছে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম পারিবারিক জীবনে সুখী নেই সে।প্রায়ই ওর স্বামীর সাথে ওর ঝগড়া হয়।কারণ অরুনার মুক্ত চিন্তা-চেতনার সাথে তার স্বামীর চিন্তা-চেতনা মিলত না।একদিন অরুনা লাইব্রেরী পড়তে এসেছে,তার সাথে আমিও।ঐদিন লাইব্রেরী বন্ধ হওয়ার কিছু আগেই আমি আর অরুনা বেরিয়ে পড়লাম।অরুনার কাছে আমার বেগটা দিয়ে কিছুক্ষনের জন্য এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে গেলাম।ফিরে এসে দেখি অরুনা কাদঁছে।প্রথমে কান্নার কারণটা বুঝতে পারিনি।যখন অরুনার হাতে আমার ডাইরীটা দেখলাম তখন সবকিছু বুঝতে পারলাম।আমার ঐ ডাইরীটার ভেতর অরুনাকে উদ্দেশ্য করে অনেক চিঠি ছিল।ঐদিন আমাদের মধ্য আর কোন কথা হলো না।পরদিন সে লাইব্রেরীতে পড়তে এসেছে।কিন্তু আমরা কেউ কারো দিকে তাকাতে পারছিলাম না।দুই একদিন যাওয়ার পর আমাদের মধ্য স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করল।মাঝে মাঝে আমরা ঘুরতে যাই।এরিমধ্য আমি খেয়াল করলাম অরুনার চোখে আমার জন্য ভাললাগা তৈরি হচ্ছে।কিছুদিন পর আমার একটা চাকরী হলো।আমি ইচ্ছে করলেই হয়তো ঢাকায় আমার পোস্টিং নিতে পারতাম।কিন্তু আমি ঢাকার বাহিরে পোস্টিং নিলাম।আর অরুনার জন্য শেষবারের মতো একটা চিঠি লিখলাম।চিঠিটা তার হাতে দিয়ে আমি ঢাকা ছেড়ে চলে আসলাম।চিঠিটা ছিল- প্রিয় অরুনা, “ আমার কাছে ভালবাসার মানে এই নয় যে কারো হাত ধরে বসে থাকা।আমার কাছে ভালবাসা মানে হচ্ছে ভালবাসার মানুষটাকে ভাল রাখা।আমি তোমার কাছে থাকলে হয়তো তুমি তোমার পারিবারিক জীবনে ভাল থাকতে পারবে না।তাই আমি চলে যাচ্ছি।আমার এই চিঠিটা পড়ার সময় যখন তোমার চোখের জল চিঠিটাকে ভিজিয়ে দিবে।তখন আমার মন বুঝতে পারবে তুমি আমাকে তোমার নরম হাত দিয়ে স্পর্শ করছ।ভালবাসা শুধু কারো পাশে বসে থেকে হয় না।মাঝে মাঝে দূরে সরে গিয়েও হয়।তাই আমি দূরে সরে গেলাম।আমি তোমাকে ভালবাসি বলেই তোমাকে আমি পেতে চাই না”
আমি যখন ঢাকা ছাড়ার জন্য বাসে উঠেছি,তখন অরুনা বারবার আমাকে ফোন দিচ্ছিল।কিন্তু আমি তার কল রিসিভ করিনি।একবার ভাবলাম অরুনার কাছে ফিরে যাই।পরে ভাবলাম কি লাভ অরুনার কষ্ট বাড়িয়ে।বাস ছেড়ে দিয়েছে হু হু করে বাতাস বইছে।তখন মোবাইল থেকে সিমটা খুলে বাতাসে সিমটাকে ছেড়ে দিলাম।অরুনাকে ছেড়ে আসলাম অনেক দিন হলো কিন্তু আমি আজো তাকে উপলব্দি করি, আর এই উপলব্দিটাই আমার ভালবাসা।
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
মিলন বনিক
অনেক সুন্দর গল্প....রোমান্টিক এবং কষ্টের....কাহিনীটা মন ছুয়ে গেল....
ওয়াহিদ মামুন লাভলু
লবাসা শুধু কারো পাশে বসে থেকে হয় না।মাঝে মাঝে দূরে সরে গিয়েও হয়।তাই আমি দূরে সরে গেলাম।আমি তোমাকে ভালবাসি বলেই তোমাকে আমি পেতে চাই না”
অভিনব দর্শন। মন উজার করা ভালবাসার কথামালা সম্বলিত লেখাটা খুব ভাল লাগল। আপনার প্রাপ্য ভোটটিও দিলাম। আমার শ্রদ্ধা জানবেন।
এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।
প্রতি মাসেই পুরস্কার
বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।
লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন
প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার
প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।